
কক্সবাজার
দেশের দক্ষিণে দেখা মিলবে উত্তাল ফেনিল ঢেউয়ের বঙ্গোপসাগর বা বালিয়াড়ি সৈকতের ধারে ঝাউবনের মেলা। শ্যামল অরণ্যের ধারে সূর্যাস্তের খেলা দৃষ্টি কাড়বে; বন্ধুর পাহাড়গুলিও দেখবেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত অনেক আকর্ষণ নিয়ে পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে।
কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য
এ বিষয় নিয়ে কিছু দ্বিমত আছে। প্রচলিত ধারায় কক্সবাজারের অবিচ্ছিন্ন সৈকতের দৈর্ঘ্য ধরা হয় ১৫৫ কিলোমিটার। কিন্তু বাংলাদেশ পর্যটন জরিপ চালিয়ে এর দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও কোনও কোনও সুত্রে এর দৈর্ঘ্য ১২২ কিলোমিটার বলেও প্রচার করা হয়। যাই হোক, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত।
ভ্রমনের ভালো সময়
সারা বছরই কক্সবাজার পর্যটকদের সোরগোলে মুখরিত থাকে। বর্ষাকালে সমুদ্র উত্তাল থাকে বলে পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা কমে যায়। শীতকালে অনেকে কক্সবাজারে পাড়ি জমালেও, বেশী শীতে সমুদ্রের ঠাণ্ডা পানিতে নামা একটু অস্বচ্ছন্দ। শীত বাদে বছরের অন্য সময়গুলিতে হোটেল ভাড়ায় কিছু ছাড় পাবার সুযোগ থাকে। ওইদিকে পূর্ণিমার রাতকে লক্ষ করে ভ্রমণ করলেও অকৃত্রিম প্রশান্তি পাবেন। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটক কক্সবাজারে পাড়ি জমায় বটে। কিন্তু যারা প্রশান্তির খোঁজে কক্সবাজারে ছুটবেন তাদের কোনোভাবেই সরকারি ছুটির দিন লক্ষ করে যাওয়া ঠিক নয়। একরকম বলা যায়, শরত ও হেমন্তের প্রকৃতিতে কক্সবাজার দেখতে সবচেয়ে সুন্দর ও ভ্রমনে উপভোগ্য; যদিও প্রখর রোদে কাবু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। প্রতি ঋতুতেই কক্সবাজার ভিন্নরুপে সুন্দর হয়ে উঠে এবং আবহাওয়ার ইতিবাচক ও হালকা কিছু বিরূপ দৃষ্টান্তের অবতারনা ঘটে।
ইতিহাস
কক্সবাজারের প্রাচীন নাম ‘পালংকি’। সর্বোচ্চ সময় এই নামেই অঞ্চলটি পরিচিত ছিল। পালংকি শব্দটি পালকি শব্দের সমার্থক, কিন্তু অঞ্চলকে পালকি রুপে চিত্রায়নের সঠিক কারন কোথাও লেখা নেই। ধারনা করা যেতে পারে, প্রকৃতির নৈসর্গিক ছোঁয়া হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় বলে অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় কক্সবাজার অঞ্চলকে একটু যত্ন করে পালকির ন্যায় কাঁধে তুলে রাখার যোগ্য বলে হয়তো এর নাম পালংকি ছিল। মুঘলরা আরাকান জয় করার পর, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সম্রাট শাহ সুজা একবার সমুদ্র ও পাহাড়ের মধ্য দিয়ে দলে বলে মূল আরাকান অঞ্চলে যাওয়ার পথে পালংকির নৈসর্গিক দৃশ্যে বিমোহিত হয়েছিলেন। ১০০০ এরও বেশী পালকি থেকে যাত্রাপথের সদস্যরা নেমে আসে ও সৈন্য-সামন্তসহ এখানেই রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। যেইখানে তারা ঘাটি করেছিলেন, বর্তমানে সে অঞ্চল ‘ডুলাহাজারা’ নামে পরিচিত যার অর্থ হাজার ঢুলি বা পালকি। আবার, এক সময় এই অঞ্চল হলুদ ফুলে আবৃত থাকতো বলে একে ‘পানোয়া’ বলেও ডাকা হত। এখন অবশ্য আর হলুদ ফুলের স্বর্গরাজ্যের তেমন দেখা পাওয়া যায় না।
পাল্টাপাল্টি আরাকান, মুঘল, ত্রিপুরা, পর্তুগীজ ও ব্রিটিশরা এ অঞ্চল শাসন করেছে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। ধারনা করা যায়, ১০ম শতাব্দী থেকে আরাকান বসতি হিসেবে পালংকির নাম আছে। ব্রিটিশ শাসন কায়েম হওয়ার পর এ অঞ্চলের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স যিনি ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার ছিলেন। হিরাম কক্সের এ অঞ্চলে দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে থেকেই ব্রিটিশদের রাজনৈতিক একটি চাল- এ অঞ্চলে বিনামুল্যে কৃষকদের জমি বিতরনের উদ্যোগে অনেক আরাকান কৃষক গোষ্ঠী এ অঞ্চলে বাসা বাঁধে। এতে করে ব্রিটিশ পাল্লা কিছুটা ভারী হয় ও মুঘলদের দমন করা সহজ হয়। মুঘলদের আরাকান জনগোষ্ঠীদের প্রতি তেমন উদারতা দেখানোর দৃষ্টান্ত নেই, যার সুযোগ ব্রিটিশরা রাজনৈতিক ভাবে নিয়েছিল। ওইদিকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ও ফরাসি ২ দলের পরস্পর বিরোধী কূটনীতিক কর্মসূচীর দরুন বর্মীরাজের সাথে ব্রিটিশদের বৈরী পরিস্থিতি তৈরি হয়। ১৭৮৪ সালে বারমারাজ(বর্মীরাজ) বোধাপোয়ার নিপীড়নে অনেক আরাকান জনগোষ্ঠী সে অঞ্চল ছেড়ে পালানো শুরু করে। এদিকে প্রায় ১৩ হাজার আরাকানি পালংকিতে আশ্রয় নিলে আগে থেকেই পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া স্থানীয় রাখাইনদের সাথেও তাদের বিরোধ বাঁধে।
ব্রিটিশরা মুলত চট্টগ্রাম অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ক্রন্দল সামলাতে ও সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরোপ করতে ক্যাপ্টেন কক্সকে নিয়োগ দেয়। ১৭৯৮ এর শেষে বা ১৭৯৯ এর শুরুতে তিনি বাহিনীসহ রামু অঞ্চলে আসেন। নাফ নদী থেকে বাঁকখালী নদীর ভেতরের অঞ্চলে কিছু আবাদি জমি বরাদ্দ করে, চাষাবাদের সরঞ্জাম ও খাবার সরবরাহ করে উদ্বাস্তু আরাকান জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ইতিমধ্যেই পালিয়ে এসে আগাম বসবাসরত স্থানীয় রাখাইনদের সাথে তাদের বিরোধও মেটানো হয়। তিনি বর্তমান কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন ও পাহাড়ের উপর একটি বৌদ্ধ মন্দির স্থাপন করেন। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগেই এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুম হানা দেয় ও হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালের ২রা আগস্ট, এ অঞ্চলের দায়িত্ব পাবার মাত্র কয়েক মাস পরেই, বর্ষায় ম্যালেরিয়া রোগে একরকম চিকিৎসার অভাবে তার রামু অঞ্চলের বাংলোবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় তার প্রতিষ্ঠা করা বাজারটি ‘কক্স সাহেবের বাজার’ নামে হিরাম কক্সের স্মৃতিস্বরূপ নামকরণ করা হয়। এই বাজারের নাম থেকেই ধীরে ধীরে ‘কক্স-বাজার’ হয়ে ‘কক্সবাজার’। নামের জনপ্রিয়তার কারনেই পুরো অঞ্চলের নাম পালংকি থেকে পাল্টে হল কক্সবাজার।
ভ্রমনের মাধ্যম
বিমান ও সড়কপথে সরাসরি কক্সবাজারে পৌঁছানো যায়। আর রেলপথে শুধু চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত দ্রুতগামী ভাল ট্রেনে চড়ে পৌঁছানো যায়। যদিও চট্টগ্রামের পরেও কিছুদূর ট্রেনে পাড়ি জমানোর সুযোগ আছে, কিন্তু না যাওয়ার পরামর্শই থাকবে। বরং চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে নতুন ব্রিজ অথবা দামপাড়া বাস কাউনটার পর্যন্ত অল্প কিছু পথ গনপরিবহনে এগিয়ে বাসে কক্সবাজার যাওয়া ভাল। বাসভেদে চট্টগ্রাম থেকে ২৮০ থেকে ৬০০ টাকায় কক্সবাজার পৌঁছানো যায়।
আর শ্রেণিভেদে ৯০০- ২৫০০ টাকা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বাসের টিকেট পাবেন।
বলা বাহুল্য, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে উচ্চগতির ট্রেন বা High-Speed Railway নির্মাণকাজ চালু হচ্ছে। কিছু সরকারি বিবৃতিতে এই ট্রেনকে কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ট্রেন ও বাসের সময়সূচী জানতে এই লিংকে প্রবেশ করুন
ইউএসবাংলা, নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ সহ অনেকগুলো ফ্লাইট কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। একমুখী ভাড়া ৩০০০ টাকার ঊর্ধ্বে।
কক্সবাজারের পথে বিভিন্ন বিমানের সময়সূচী ও বাসের তালিকা পাবেন এই প্রবন্ধের নিচের ভাগে।

দর্শনীয় স্থানসমূহ
পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে কক্সবাজার জেলা ভ্রমণ করতে অনেক দিন লাগবে। কিন্তু বাছাইকৃত জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলি ঘুরতে সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহ লাগবে। কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাগুলি হল কক্সবাজার শহর, ইনানি, টেকনাফ, মেরিন ড্রাইভ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ছেঁড়া দ্বীপ, মহেশখালী, সোনাদিয়া সহ ইত্যাদি। এসব অঞ্চলের আরও বিস্তারিত ভ্রমণ গাইড পাবেন নিচে স্ক্রোল করলে।
কক্সবাজার হোটেল
কক্সবাজার হোটেল মোটেলের দিক থেকে অনন্য। থাকার জন্য হাজার খানেক বিকল্প পাবেন। ১-২ তারকা থেকে ৫ তারকা মানের অনেকগুলো হোটেল আছে। সরকারি ব্যবস্থায়ও কিছু হোটেল মোটেল আছে। হোটেল শৈবালের ভাড়া ১,০০০-৩,০০০ টাকা। হোটেল লাবণীর ভাড়া ৬০০-৩,০০০ টাকা। উপলের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা। সি ক্রাউনের ভাড়া ২০০-৩,০০০ টাকা। জিয়া গেস্ট হল ৩০০-২,০০০ টাকা। বিভিন্ন জনপ্রিয় হোটেলের নাম ও ভাড়া সম্পর্কে ধারনা পাবেন নিচে স্ক্রোল করলে।

এই প্রবন্ধটি বর্তমানে আপডেট হচ্ছে
Assalamu alaikkum vai ami apnar niyomito video dekhi abong khuvi valo lage.online a 5star hotel ki vabe book korbo and offer gulo sompor k ki vabe kheyal rakbo…
I like the efforts you have put in this, appreciate it for all the great content. Bili Cross Calypso La Verne Thorin Leibman
Thanks-a-mundo for the blog. Really looking forward to read more. Really Great. Lizzie Cirillo Micah