চট্টগ্রাম শহরের আশেপাশে দর্শনীয় কিছু চমকপ্রদ এলাকাগুলির অবস্থান সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই উপজেলায়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত এই ২টি উপজেলা বর্তমানে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ক্রমশ জনপ্রিয় স্থানে পরিণত হচ্ছে। এদের ভেতর সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশী।
সীতাকুণ্ডে কিভাবে যাবেন?
সরাসরি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় সীতাকুণ্ড অঞ্চলে পৌঁছানো খুব সোজা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম শহর(সিটি গেট) থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্বেই সীতাকুণ্ডের অবস্থান। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন বাস ও ট্রেন ছেড়ে যায় সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে। এ পথে বাস যাত্রাটাই যাত্রীরা বেশী পছন্দ করে। ট্রেন ও বাস সময়সূচী নিচে দেওয়া আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম এ কে খান মোড় থেকে সি এন জি রিজার্ভ করে ২৫০-৩৫০ টাকার ভেতর চলে যেতে পারবেন সীতাকুণ্ড।
সীতাকুণ্ডের নামকরণ কিভাবে হয়েছিলো?
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্রণীত রামায়ণ কাব্যের বর্ণনানুসারে এর প্রধান নারী চরিত্র সীতা ছিল রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্রের স্ত্রী। বিবাহের প্রায় ১২ বছর পর রামকে যখন যৌবরাজ্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে, তার ঠিক আগেই কৌশলে ষড়যন্ত্র করে তাকে ১৪ বছরের বনবাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধ রাজা দশরথ রাজনীতির চক্রে পুত্রকে বনবাসে প্রেরণ ঠেকাতে পারেননি। এই বনবাসে রামচন্দ্রের সাথী হয়েছিলো তার ভাই লক্ষণ ও স্ত্রী সীতা। তারা আসবে যেনে মহামুনি ভার্গব ৩ জনের জন্য ৩টি কুণ্ড স্থাপন করেছিলো স্নান করবার জন্য। কুণ্ড শব্দের অর্থ পুকুর। সীতার জন্য নির্মিত কুণ্ডের জনপ্রিয়তার কারণে, এর নামেই পরবর্তীতে এই এলাকার নামকরণ হয় সীতাকুণ্ড। বনবাসে থাকাকালীন কৌশলে রাবণ সীতাকে কৌশলে অপহরণ করে। দীর্ঘকাল রাক্ষসপল্লীতে আটক থাকার কারনে সীতার সতীত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিলো। রাবণকে যেমন রাম ও লক্ষণ পরাজিত করে, একই সাথে সীতাকেও ঐতিহাসিক অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে হয়। বনবাসের মেয়াদ শেষ ও ঐতিহাসিক অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তার চরিত্র নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠায় স্বামী রাম তাকে নির্বাসনে প্রেরণ করেন। তখন আশ্রয় হয়েছিলো ঋষি বাল্মীকির আশ্রমে।

এলাকার ইতিহাস
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, নব্যপ্রস্তর যুগে এই এলাকায় মানুষের বসতি শুরু হয়। ওই যুগের মানুষের ব্যবহৃত নানান সরঞ্জামের সন্ধান মিলেছে সীতাকুণ্ডে। শোনা যায়, খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দীগুলোতে চীনের অতি সমৃদ্ধ সিল্করোডের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই এলাকাটি। ষষ্ঠ শতকে আরব বণিকেরা এখানকার বারআউলিয়াতে আসে। এরপর সপ্তম শতক পর্যন্ত অত্র এলাকা এবং সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধিগ্রস্থ হয়। ক্রমান্বয়ে পর্তুগীজরাও এই অঞ্চল শাসন করে। দীর্ঘ ১০০ বছরেরও অধিক সময়ের আরাকান ও পর্তুগীজ উপনিবেশ শেষে, মুঘল রাজ্য এই এলাকাটিকে দখল করে। কিন্তু পানিপথের যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের পর এলাকাটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। এরপর ক্রমান্বয়ে ইংরেজ ও পাকিস্তানি শাসন শেষে, এলাকাটি বর্তমান বাংলাদেশের অধিভুক্ত হয়।
সীতাকুণ্ডে কী কী দেখবেন?
চন্দ্রনাথ পাহাড়-
সীতাকুণ্ডে গিয়ে এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন-স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড় না গেলেই নয়। একটু সবল দেহের অধিকারী মানুষজন যারা পাহাড় বাইতে পছন্দ করে, তাদের জন্য চন্দ্রনাথ পাহাড়টি একটি অনন্য জায়গা। আর এর ঠিক চূড়ায় অবস্থান করছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি মন্দিরের একটি- যার নাম হলো চন্ত্রনাথ মন্দির।
এই পাহাড়ের অঞ্চলটি হিমালয়ার পূর্বপ্রান্তের বিচ্ছিন্ন অংশবিশেষ, যা ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের ভেতর দিয়ে ফেনী নদী পার করে চট্টগ্রামের সাথে এসে মিশেছে। আর এর পাদদেশেই গড়ে উঠেছে সীতাকুণ্ডের বহুল জনপ্রিয় ইকোপার্ক। পাহাড়ের তলদেশ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়ার উচ্চতা প্রায় ১০২০ ফুট। এখানে মন্দির দর্শনের পাশাপাশি পাহাড়ের উপর থেকে প্রকৃতির চমৎকার চেহারা উপভোগ করতে পাড়ি জমায় হাজার হাজার দর্শনার্থী।
যাওয়ার উপায়ঃ
সীতাকুণ্ড বাজার থেকে হেঁটে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত চলে যেতে পারেন। কিন্তু এতে অনেক সময় লাগবে। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে পাহাড়ের গোঁড়ায় গিয়ে পৌঁছানো। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা। একটু দরদাম করে নেওয়াই ভালো।
অবশ্যই মনে রাখবেন এই পাহাড়ে ওঠার ও নামার পথ আলাদা। অনেকেই ভুল করে পথ পরিবর্তন করে ফেলে। এতে করে ওঠানামার কষ্ট বেড়ে যায়। পাহাড়ের গোঁড়ায় প্রথম ফটক দিয়ে প্রবেশের পর হাতের বাম দিকে পথ চলে যায় ওপরে ওঠার জন্য। আর নামার পথটিতে সিঁড়ি দেওয়া আছে। তাই ২ পথের মধ্যে পার্থক্য করে নিবেন।
পাহাড় বেয়ে উঠতে প্রায় ১ ঘণ্টার মতন সময় অতিবাহন হয়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ও শারীরিক অবস্থার ভিন্নতার কারনে ২ – ২.৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে শুধু আরোহণ করার জন্য। নেমে আসতে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এছাড়া সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতর দিয়ে আরেকটি রাস্তা আছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্য। ওই রাস্তা বাইতে সিএনজি অথবা গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া উত্তম। যারা ট্র্যাকিং করতে আগ্রহী না, তারা ওই বিকল্প পথ অবলম্বন করতে পারেন।

চন্দ্রনাথ মন্দিরঃ
শ্রী শ্রী চন্দ্রনাথ মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ তীর্থস্থান ও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি মন্দিরের একটি। হিন্দু পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অনুসারে এখানে সতীদেবীর হস্ত পতিত হয়েছিলো এবং একই সাথে এই মন্দিরটি পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকটি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম, যা একে বিশেষত্ব দান করেছে। তাই এই মন্দিরটি দর্শন করতে বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর বহু প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা ভিড় জমায় এখানে। আর মন্দির দর্শনের পাশাপাশি পাহাড়ের উপর থেকে প্রকৃতির চমৎকার চেহারা উপভোগ করতে পাড়ি জমায় হাজার হাজার দর্শনার্থী। নিচ থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ১০২০ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ঠিক উপরেই এর অবস্থান।

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কঃ
বাংলাদেশের প্রথম ও এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থান সীতাকুণ্ডে। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানকার জনপদে ভ্রমনে এসেছিলেন বিধায় তাঁর স্মৃতিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে উদ্যানের ভেতরে। উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্রের কারণে এলাকাটি বিপুল প্রশংসিত হয়েছে। এখানে রয়েছে প্রায় ১৫০ প্রজাতির ফুল, ৫০ প্রজাতির বিভিন্ন জাতের অর্কিড ও বিভিন্ন ধরণের প্রাণী। এছাড়াও এই জায়গাটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে নিকটবর্তী ২টি ঝরনা, যার একটির নাম হলো সহস্রধারা ও আরেকটির নাম সুপ্তধারা। কিন্তু এই ঝরনাগুলো পর্যন্ত গিয়ে পৌছাতে একটু দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়।
কিভাবে যাবেন ও ভাড়া/টিকেট সংক্রান্ত তথ্যঃ
সীতাকুণ্ড বড়বাজার থেকে চট্টগ্রামের পথে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্বে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশেই ইকোপার্কের অবস্থান। সিএনজি সহ পার্কটিতে প্রবেশমূল্য ৮০ টাকা ও সিএনজি ছাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মুল্য ৫ ডলার। এই এলাকা থেকে ৬ কিলোমিটার পথ পার করে চলে যাওয়া যায় চন্দ্রনাথ পাহাড়ে, যেখানে যেতে কিছুদূর পথ সিএনজি অথবা গাড়ি ভাড়া করে অতিক্রম করতে হয়। বিস্তারিত জানতে পারবেন সরাসরি পার্ক অঞ্চলে।
সহস্রধারা ১ ও সুপ্তধারা ঝরনা
ইকোপার্কের ফটক থেকে ১.১ কিলোমিটার দূরত্বে নিচের দিকে সুপ্তধারা ঝরনার অবস্থান। আর ২.৮ কিলোমিটার দূরত্বে উপরের দিকে প্রথম সহস্রধারা ঝরনার অবস্থান। ২ টি ঝরনার চেহারা ২ রকম, তাই আলাদা করে ঝরনাগুলো দেখাই উত্তম। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঝরনাগুলি ওঠানামার পথ কষ্টসাপেক্ষ বিধায় একই দিনে এগুলো দেখার পাশাপাশি অন্য এলাকায় ভ্রমণ কর্মসূচী না রাখাই ভালো।
বিকেল ৪ – ৪:১৫র ভেতর সুপ্তধারার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর ৬ – ৬:৩০ এর ভেতর সহস্রধারার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই এই হিসেবে পরিকল্পনা করা উত্তম।

গুলিয়াখালি সৈকত
স্থানীয় লোকদের কাছে এই সৈকতটি “মুরাদপুর সৈকত/বীচ” বলেও পরিচিত। গুলিয়াখালি সমুদ্র উপকূলটি বাংলাদেশের অন্যান্য সমুদ্র সৈকতের চেয়ে একেবারে আলাদা। এখানে সৈকতে বালুর বদলে পাবেন সবুজ চারণভূমি। মাঠে পালে পালে গবাদি পশুর দেখা পাবেন, যা পরিবেশটির নান্দনিক সৌন্দর্য অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। আশে পাশে পাহাড় দিয়ে ছাওয়া ও সবুজ শ্যামলে ঘেরা এই স্থানটি যেকাররই চোখ জুড়িয়ে দিতে বাধ্য। প্রায় কক্সবাজারের ন্যায় জোরালো ঢেউ থাকায় স্থানটি যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি কিছুটা ভয়ংকর। তাই গোসল করবার সময় বেশী দূরে না আগানোটাই শ্রেয়। আরেকটু বেশী পর্যায়ে রোমাঞ্চ উপভোগ করতে নৌকা নিয়ে চলে যান দ্বীপের কোল ঘেঁষে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে আছড়ে পড়া নৌকাভ্রমণের স্বাদ নিতে। জলরাশির ওপর দিয়ে পার হবার সময় দৃষ্টিনন্দন ম্যানগ্রোভ বনভূমির দৃশ্য উপভোগ করতেও কিন্তু ভুলবেন না। বনভূমির সুদূর প্রান্ত পর্যন্ত কেওড়া গাছের সমারোহ পর্যটকদের নজর কাড়বে।


যাওয়ার উপায় ও সময়ঃ
সীতাকুণ্ড বাজার থেকেই গুলিয়াখালি সৈকতে আসতে হয়। ২টি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে গ্রামাঞ্চলের ভেতর দিয়ে চলে আসুন দ্বীপ অঞ্চলটির পূর্বপ্রান্তে।
সিএনজি ভাড়া – ১৫০-২০০ টাকা রিজার্ভ বাবদ (একমুখী ভাড়া)। আর ভাগাভাগি করে আসলে প্রতিজন ১৫-২০টাকা মাত্র (একমুখী ভাড়া)।
নৌকায় চড়তে একটু দরদাম করে নিতে হবে। সাধারণত সিএনজি অথবা গাড়ি যে পর্যন্ত পৌছায়, সেখান থেকে ১৫-২০ জন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিনচালিত নৌকা রিজার্ভ করে আধাবেলার জন্য ঘুরতে প্রায় ৩০০-৪০০ টাকা লাগতে পারে। অতিরিক্ত ১০০-১৫০ টাকার বিনিময়ে উত্তাল সমুদ্রের একটু ভেতর পর্যন্ত নৌকায় ঢু মেরে আসতে পারেন।
এই সৈকত এলাকাটিকে দ্বীপ বলার কারণ হলো বর্ষাকালে সমুদ্রের পানি একটি চ্যানেলের মাধ্যমে মূল ভূমির সঙ্গে এলাকাটির বিভাজন তৈরি করে। যার ফলে নৌকায় চড়ে সবুজে ঘেরা পরিবেশের মধ্য দিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারেন সৈকতের একেবারে সন্নিকটে। বছরের অন্য সময়গুলিতে আসলে এখানে পানির বদলে প্রচুর পরিমানে কাঁদার দেখা পাওয়া যায়, যা পার করে আপনাদের পৌছাতে হবে সৈকতের মুল অংশে। সেই কাঁদার পুরুত্বও থাকে অনেক গভীর।
তাই বর্ষাকাল বা বর্ষার আগে পরের সময়গুলিতে এখানে ভ্রমণ করা উত্তম। একেবারে সকালের ভাগে অথবা বিকেলের দিকে এলাকাটির চেহারা সবচেয়ে সুন্দর।

বাঁশবাড়িয়া সৈকত
বিগত কয়েক বছরে বাঁশবাড়িয়া সৈকতের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। এর মূল কারন হলো সৈকতটি দেখতে কিছুটা কক্সবাজারের মতন আর সমুদ্রের ভেতর পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ একটি লোহার তৈরি হাঁটাপথের আলোচিত জায়গা এটি। জোয়ারের সময় যখন তীরের দিকে পানির স্রোত ও পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন এই হাঁটাপথটির রোমাঞ্চ আরও শতগুণে বেড়ে যায়। একেবারে ভেতরের দিকে পৌঁছে অথৈ সমুদ্রে ঢেউয়ের দোলা উপভোগ করতে পারবেন। হাঁটা পথের জালের উপর দিয়ে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এর আরোহণকারীকে এমন এক তৃপ্তিরাজ্যে নিয়ে যাবে, যে সেখান থেকে ছেড়ে আসতে বিন্দুমাত্রও মন চাবে না। একটু দুঃখজনক সংবাদ হলো, এই বহুল আলোচিত রোমাঞ্চকর পথটি যেমন বিনোদক, তেমনি ভয়ঙ্কর। কিছু দুর্ঘটনার জের ধরে বাঁশবাড়িয়া সৈকতের এই হাঁটাপথটি আপাতত সাধারণ জনগনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও মাঝে মাঝেই পথটি খুলে দেওয়ার সংবাদও পাওয়া যায়। এই পথটির মজা উপভোগ করতে না পারলেও, এর আশপাশ দিয়ে বাঁশবাড়িয়া সৈকতের চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন। বালুর চড় ও গাছপালাগুলি যেমন একে ছোটখাটো একটি কক্সবাজার সৈকতের রূপদান করে, তেমনি এখানে আসলে আপনি মেতে উঠতে পারেন খেলার আমেজে। আশেপাশে দেখা মিলতে পারে অনেক ফুটবল ও ক্রিকেট প্রেমিকদের।


কিভাবে যাবেন ও কখন যাবেন?
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে, চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে নামতে হবে বাঁশবাড়িয়া বাস স্টপে। চট্টগ্রামের এ কে খান মোড় থেকে সীতাকুণ্ড-গামী বাস নিতে পারেন। বাসভেদে ২০-৫০ টাকার ভেতর নেমে যেতে পারেন বাঁশবাড়িয়া বাসস্টপে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-মুখী পথে বাঁশবাড়িয়া বাজারে নেমে যাবেন, যা সীতাকুণ্ড পার করে কিছুদূর পরেই অবস্থিত। এছাড়া ট্রেনে চড়ে সীতাকুণ্ডে নামতে পারেন, যেখান থেকে লোকাল বাস/টেম্পু চড়ে সরাসরি চলে যেতে পারেন বাঁশবাড়িয়া বাস স্টপে। সেখান থেকে জনপ্রতি ১৫-২০ টাকায় অথবা রিজার্ভে ১৫০-২০০ টাকায় একমুখী সিএনজি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন বাঁশবাড়িয়া সৈকতে।
সারা বছরই এই জায়গাটি ভ্রমণ করবার মতন। বর্ষাকালে সমুদ্রের পানি টইটুম্বুর থাকবে বিধায় হাঁটাপথটি বেশী ভালো লাগবে। শীতকালে খেজুর গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। লিটারপ্রতি ২০টাকায় খেজুর রস বিক্রির কথাও শোনা যায়। সূর্যাস্তের আগমুহূর্তে জায়গাটির চেহারা সবচেয়ে সুন্দর।

কুমিরা-সন্দ্বীপ ফেরিঘাট
সীতাকুণ্ড উপজেলার একটি ইউনিওনের নাম কুমিরা। আর কুমিরা থেকে সন্দ্বীপে যাবার ফেরী ব্যবস্থা থাকায় এখানকার ঘাট অঞ্চলটি এখন অনেক জনপ্রিয়। সম্প্রতি ঘাট এলাকায় আরামদায়ক বিচরনের জন্য নির্মিত হয়েছে প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি হাঁটাপথের, যা সমুদ্রের ওপর দিয়ে দৃশ্য দেখতে দেখতে হেঁটে চলার একটি অন্যরকম মনোরম অভিজ্ঞতার সঞ্চার করবে। এই হাঁটাপথটিকে অনেকে কুমিরা ব্রীজ, ঘাটঘর ব্রীজ বা ফেরীঘাট ব্রীজ বলে চিনে থাকে।

একটু বিকেল হলেই এখানে দেখা মিলবে ঝাঁকে ঝাঁকে দর্শনার্থীর। ব্রীজে দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন বড় বড় কিছু জাহাজ, যা হয়তো তখন আসছে, ছেড়ে যাচ্ছে অথবা অপেক্ষমাণ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই জাহাজগুলির আসা-যাওয়া শুধুই জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য। হাঁটাপথের একেবারে পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে যেমন সমুদ্রের ভেতরে অবস্থান করার মজা উপভোগ করতে পারেন, আবার পূর্বদিকে চেয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারেন। জাহাজঘাট থেকে নৌকা নিয়ে সমুদ্র ঘুরতে জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা লাগে। তার পাশাপাশি স্পীডবোট ভাড়া করে সন্দ্বীপেও চলে যাওয়া যায়।
সন্দ্বীপ যাবার একমুখী স্পীডবোট ভাড়া জনপ্রতি ২৫০-৩০০ টাকা। ঈদের মৌসুমে এই ভাড়া অনেকটাই বেড়ে যায়। যাত্রাপথে সময় লাগবে প্রায় ৩০ মিনিট। আর সন্দ্বীপের আগমনী ঘাট থেকে শহরে পৌছাতে ২০০-২৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া গুণতে হবে।
যাওয়ার উপায় ও উপযুক্ত সময়ঃ
চট্টগ্রামের অলংকার বা এ কে খান মোড় থেকে বাস নিয়ে নামতে পারেন কুমিরার ঘাটঘর রোডে। সেখান থেকে ২০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় চলে যেতে পারেন ফেরিঘাট। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে বড় বাস থামিয়ে দিবে ‘ছোট কুমিরা’ বাস স্টেশনে। এখান থেকে জনপ্রতি ৫টাকা সিএনজি ভাড়ায় অথবা ২০-২৫ মিনিটের হাঁটাপথে চলে যেতে পারেন কুমিরা ঘাটঘর রোডে, যেখান থেকে অটোরিকশা/টমটম পেয়ে যাবেন। এছাড়া, সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী অনেক লোকাল বাস “বড় কুমিরা” মোড়ে থামে। সেখান থেকে ২০-৩০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় ফেরিঘাটে চলে যেতে পারেন।
সারা বছরই কুমিরা ঘাট জমজমাট থাকে। তবে বর্ষার মৌসুমে ব্রীজে হাঁটতে বেশী ভালো লাগতে পারে। বিকেলের ভাগে এলাকাটি সরগরম থাকে, কারন এটিই কুমিরা ঘাট ভ্রমনের সবচেয়ে সুন্দর সময়।
ঝরঝরি ঝরনা
এই ঝরনাটি মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড বাজার এলাকার মাঝামাঝি পন্থিছিলা এলাকায় অবস্থিত। মীরসরাই থেকে সীতাকুণ্ড আসার পথে পন্থিছিলা বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে পূর্বদিকে রেললাইন বরাবর যেতে হবে। এই রেললাইন ধরে সামনে এগোলেই দেখা পাবেন কানি ঝিরিপথের। পেঁচানো ঝিরিপথ ধরে পন্থিছিলা থেকে ১ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে পৌছাতে পারবেন এই ঝর্ণায়। যাওয়ার পথে এলাকাবাসী কারোর থেকে যাওয়ার উপায় জেনে নেওয়াই উত্তম।
ঝরঝরি ঝরনাটি ছোট। তাই এখানে ঘুরতে গেলে যতটা না ঝরনার দৃশ্য উপভোগ করাটা প্রাধান্য পাবে, এর থেকে বেশী প্রাধান্য পাবে পন্থিছিলা-ঝরঝরি ট্রেইল/গমনপথটি ধরে হেঁটে পুরো পথটি অন্বেষণ করার রোমাঞ্চ উপভোগ করাটা।

ক্লান্ত শরীরে ঝর্ণায় গোসল করাটা আনন্দদায়ক হবে।পন্থিছিলা ছাড়াও আরেকটি পথ ধরে আসা যায় ঝরঝরি ঝরনায়। কমলদহ ট্রেইল ধরে বড় কমলদহ ঝরনা পার করে সামনে এগিয়ে ডান বরাবর পাহাড়ি পথ ধরে চলে যাওয়া যায় ঝরঝরি ঝরনায়।
ভাটিয়ারী হ্রদঃ
অনিন্দ্য সুন্দর ভাটিয়ারী হ্রদটি চট্টগ্রাম ও সীতাকুণ্ডবাসির সবচেয়ে পছন্দের জায়গাগুলির ভেতর একটি। চট্টগ্রাম সিটি গেট থেকে প্রায় ২০ মিনিট দূরত্বে ভাটিয়ারী হ্রদটি চট্টগ্রাম বাসীর একটি পছন্দের বিনোদনকেন্দ্র। এর অবস্থান সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নে।

এখানে রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়ের সমারোহ, স্বচ্ছ পানির জলাশয় ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ কোর্স। এর ভেতর দিয়ে পার হওয়া হাটহাজারি-ভাটিয়ারী লিঙ্ক রোড রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। পুরো এলাকাটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত বিধায় এখানে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোন দুশ্চিন্তাই নাই।
একটু বিকেলের ভাগে সূর্যাস্তের আগ-মুহূর্তে এই জায়গাটির মনোরম পরিবেশ যেকোনো কাউকে বেশী মুগ্ধ করবে। আর সূর্যাস্ত দেখার জন্যও এখানে রয়েছে বড় আয়োজন। সুনির্দিষ্ট সানসেট পয়েন্ট থেকে ভাটিয়ারী ইউনিওয়নের উপর দিয়ে সূর্যাস্তের চমৎকার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তার পাশাপাশি চা-নাস্তার জন্য জনপ্রিয় এখানকার ক্যাফে ২৪ রেস্তোরাঁ। এখানে হ্রদের পানিতে নৌকা ভাড়া করে চলতে পারবে; এমনকি অনুমতি সাপেক্ষে ও নির্দিষ্ট অঙ্কের বিনিময়ে ছিপ ফেলে মাছ শিকার পর্যন্ত করতে পারবেন।
যাওয়ার উপায়ঃ
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপ্রান্তে বড় দীঘির পাড় বাস স্টপে নামতে হবে। এরপর সেখান থেকে সিএনজি বা লেগুনায় চড়ে চলে যেতে পারবেন ভাটিয়ারী হ্রদে। লেগুনার ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০ টাকা। সিএনজি রিজার্ভ করে ১২০-২০০ টাকার ভেতর ক্যাফে ২৪ রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে নামতে পারেন। ভাটিয়ারী ক্যাম্পে প্রবেশ মুল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা ও এডভেঞ্চার জনপ্রতি ১০০ টাকা।
বড় ও ছোট কমলদহ ঝরনা
সীতাকুণ্ডের কয়েকটি পরিচিত ঝরনার ভেতর একটি কমলদহ ঝরনা। যদিও এখানে কমলদহ ঝরনা আছে ২টি, তাও বড় কমলদহ ঝরনাটিই বেশী জনপ্রিয়। উপজেলার বড় দারগারহাঁট এলাকার অনেক কাছেই এর অবস্থান। এই ঝরনার আশেপাশেই রয়েছে আরও ৪-৫ টি ঝরনা। গমনপথটি সহজ বিধায় ইদানীংকালে কিছু পর্যটকের কাছেও এই এলাকাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

যাওয়ার উপায়
চট্টগ্রাম ও ঢাকা উভয় পথ থেকে সীতাকুণ্ডের বড় দারগারহাঁট বাজার বাস স্টপে নামবেন। একই সাথে যারা ফেনী হয়ে অথবা ফেনী থেকে আসছেন তারাও একই বাস স্টপে নামবেন। এখান থেকে উত্তর দিকে ইট খোলা বা ইট ভাটার সন্ধান করবেন। এর পাশ দিয়েই এলাকার পূর্ব দিকে এগোলেই ঝিরিপথের দেখা পাবেন। এই ঝিরিপথ ধরেই কমলদহ ট্রেইলের অবস্থান। ঝিরিপথটি খুঁজে বের করতে এলাকাবাসীর সহায়তা নিন। ইটখোলা দিয়ে প্রবেশ করে কিছুদূর সামনে এগিয়ে খাবার হোটেল পার করার পর গমনপথ ২ ভাগে বিভক্ত হয়, যেখানে বামের পথ ধরে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন বড় কমলদহ ঝরনা। সাধারণত ইট খোলা থেকে ৩০-৪০ মিনিটের হাঁটা পথে কমলদহ ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। কমলদহ ট্রেইলের সবগুলি ঝর্ণা উপভোগ করতে সারাদিন সময় লেগে যাবে।
রূপসী/ছাগলকান্দা ঝরনা ও পাথরভাঙ্গা ঝরনা
কমলদহ ঝরনা পার করে ওপরে উঠে গেলেই ছোটবড় কয়েকটি ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। এর ভেতর ছাগলকান্দা ঝরনা জনপ্রিয়। ছাগলকান্দা ঝরনার আরেক নাম রূপসী ঝরনা। এখানে আসতে হলে বড় কমলদহ ঝরন বেয়ে প্রথমে ওপরে উঠতে হবে। যদিও ঝরনা ধরে উঠা বাদেও এখানে আরেকটি পথ আছে, যা কিছুদূর ঘুরে এসে রূপসী ঝরনার পথে গিয়ে মিলেছে। বড় কমলদহ ঝরনার ওপরে ওঠার পর কিছুদূর ট্র্যাকিং করে বাম বরাবর সামনে এগোলেই ছাগলকান্দা ঝরনার দেখা পাবেন। ছাগলকান্দা ঝরনার খুব কাছেই রয়েছে আরও ২টি ঝরনা।
কমলদহ ঝরনার ওপরের ট্রেইল ধরে সামনে এগিয়ে বামে গেলে যেমন রূপসী/ছাগলকান্দা ঝরনার দেখা পাবেন। তেমনি ডান বরাবর গেলে পাহাড় বেয়ে, ঝিরিপথ পেরিয়ে ও ছোট একটি ঝরন পার করে একটু সুরঙ্গের মতন দেখতে জায়গার ভেতর দিয়ে পৌছাবেন পাথরভাঙ্গা ঝরনায়।
আর পাথরভাঙ্গা ঝরনার আশপাশ দিয়ে একটি পথ চলে যায় ঝরঝরি ঝরনার দিকে।

সহস্রধারা সেচ প্রকল্প, সহস্রধারা ২ ঝরনা
সহস্রধারা সেচ প্রকল্পটিকে অনেকে সহস্রধারা লেক বলে চিনে থাকে। সীতাকুণ্ডের ছোট দারগারহাঁট এলাকার খুব কাছেই এর অবস্থান। ছোট ও সুন্দর এই হ্রদটি পার করে দেখা পাবেন সহস্রধারা ২ নং ঝরনার। অনেকে এটিকে মূল সহস্রধারা ঝরনা হিসেবেও চিনে থাকে। এই ঝরনাটি একটু সরু ও তুলনামূলক উঁচা। এর ওপরে গিয়ে পৌঁছানটাও কষ্টকর। সেচ প্রকল্পের পাশেই মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছর মেলাও বসে।
এখানে পৌছাতে হলে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছোট দারগারহাঁট বাস স্টপে নামবেন। এরপর পূর্বদিকে সহস্রধারা লেকের সন্ধান করবেন। সহস্রধারা লেক পার করেই সহস্রধারা ২ নং ঝরনার দেখা পাবেন। হ্রদ থেকে ঝর্ণা পর্যন্ত পৌছাতে ২০ মিনিটের অধিক সময় লাগে।
বাড়বকুণ্ড ঝরনা
কালভৈরবী মন্দিরের পাশে ঝিরিপথ ধরেই বাড়বকুণ্ড ঝরনার অবস্থান। এই কালভৈরবী মন্দির অনেক প্রাচীন, এখন যার জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। ঝিরিপথ ধরে ছোট ও মাঝারি আকারের কিছু ঝরনা দেখা পাওয়া যায়। বাড়বকুণ্ড ঝরনাটি এগুলির ভেতর অন্যতম। আর কালভৈরবী মন্দিরের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র হট ওয়াটার স্প্রিং।
সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড বাসস্টপে নেমে পূর্বদিক বরাবর পথ ধরে প্রায় ১ ঘণ্টা এগোলেই প্রথমে পৌছাবেন কালভৈরবী মন্দিরে। এরপর সেখান থেকে ঝিরিপথ অনুসরণ করে ঝরনা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারবেন। বাড়বকুণ্ড বাস স্টপ থেকে পথটি বের করতে এলাকাবাসীর সহায়তা নিন।
আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থান, ঝরনা ও ট্রেইল/গমনপথঃ
- সীতাকুণ্ডের ছোট কমলদহ বাইপাসের আশেপাশেই পূর্বদিকে নীলাম্বর হ্রদ। আর এই নীলাম্বর হ্রদ ধরে এগিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠতে হয় ঝিরিপথের সন্ধানে। সেই ঝিরিপথ ধরেই ৩টি ঝরনার দেখা পাওয়া যায় –
- হরিণমারা ঝরনা,
- হাঁটুভাঙা ঝরনা,
- সর্পপ্রপাত,
- সর্পপ্রপাতের সাথেই বাওয়াছড়ার মুখও পাওয়া যায়।
- সীতাকুণ্ড-মীরসরাই পার্বত পরিসরের সোনাইছড়ি ট্রেইল
- মীরসরাই-এর মহামায়া লেক ও ইকোপার্ক
- খইয়াছড়া ঝরনা
- নাপিত্তাছড়া ঝরনা
- বোয়ালিয়া, বাউশ্যা, উঠান, অমরমাণিক্য ঝরনা ও গমনপথ
সীতাকুণ্ডে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড-গামী বাস ব্যবস্থা
ঢাকার যেকোনো বড় বাস টার্মিনাল, অর্থাৎ মহাখালী, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল; এমনকি উত্তরা, নদ্দাবাজার,আরামবাগ, কচুক্ষেত-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রাম-গামী বাসের সন্ধান পাবেন। এসব বাস সীতাকুণ্ডের উপর দিয়েই পার হয়। যার কারনে ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়া আসার ব্যবস্থা অনেক সোজা।
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড-গামী বাস ব্যবস্থা
চট্টগ্রামের এ কে খান, অলংকার মোড় অথবা কদমতলী থেকে লোকাল বাস পেয়ে যাবেন সীতাকুণ্ডের উদ্দেশ্যে। জনপ্রতি ৩০-৮০ টাকা ভাড়ায় চলে যেতে পারবেন সীতাকুণ্ড।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কিছু বাস সার্ভিসের নম্বর দেওয়া হলো-
- স্টার লাইন স্পেশাল ননএসি সায়েদাবাদ ০১৯৭৩-২৫৯৬৫৩,০১৯৭৩-২৬৯৬৫৪
- সৌদিয়া পরিবহন ননএসি সায়েদাবাদ ০১৯১৯৬৫৪৮৫৬, ০১৯১৯৬৫৪৮৫৭ এসি আরামবাগ/পান্থপথ ০১৯১৯-৬৫৪৯২৬, ০১৯১৯-৬৫৪৯৩২, ০১৯১৯-৬৫৪৯৩৩
- বাগদাদ এক্সপ্রেস এসি আরামবাগ +৮৮০১৭৩০-০৪৬০৪০, +৮৮০১৭৩০-০৪৬০৫০
- হানিফ এন্টারপ্রাইজ ননএসি সায়েদাবাদ ০১৭১৩-৪০২৬৭৩, ০১৭১৩-৪০২৬৮৪, ০১৭১৩-৪০২৬৭১ এসি আরামবাগ ০১৭১৩-৪০২৬৭১,০১৭১৩-৪০২৬৩১
- ঈগল পরিবহন ,ননএসি মতিঝিল ০২-৭১৯৩৫০৪, ৯০০৬৭০০,৯০১৩২২৪, ৯৩৪৬৩৯১,
- গ্রীন লাইন এসি রাজারবাগ ৯৩৪২৫৮০,৯৩৩৯৬২৩ চট্টগ্রাম একে খান রোড
ফোনঃ ০৩১-৭৫১১৬১, ০১৭৩০-০৬০০২১ - ইউনিক সার্ভিস ননএসি সায়েদাবাদ ৭৫৪৬৩, ০১১৯৬২০৬০৫২
- এস. আলম পরিবহন ননএসি কমলাপুর ০১৯১৭৭২০৩৯৫, ০২-৮৩১৫০৮৭
- শ্যামলী পরিবহন এসি এবং ননএসি সায়েদাবাদ ০২-৯০০৩৩৩১,৮০৩৪২৭৫, ০২- ৮৩৬০২৪১,
- সোহাগ পরিবহন, এসি এবং ননএসি কমলাপুর/ কল্যাণপুর ০২-৮১২৪৯৬৪,০১৭৪০-৫৪৩১৩৬
- সিল্ক লাইন, এসি উত্তরা (রাতে) আরামবাগ (দিনে) ০১৯১৫-০৪৫৫৮৬,০২-৭১০২৪৬১
চট্টগ্রাম মেইল | ০৬ : ৪৪ |
---|---|
ডেমু | ০৭ : ৩৯ |
জালালাবাদ | ১১ : ২৫ |
কর্ণফুলী | ১৭ : ২০ |
সাগরিকা | ১৮ : ২৯ |
নাছিরাবাদ | ১৯ : ৩৩ |
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড-গামী ট্রেন
সাগরিকা | ০৭ : ৩০ |
---|---|
কর্ণফুলী | ১০ : ০০ |
নাছিরাবাদ | ১৫ : ৩০ |
ডেমু | ১৭ : ৩০ |
জালালাবাদ | ১৯ : ৩০ |
এছাড়া ঢাকা থেকে ফেনীর উদ্দেশ্যে ট্রেন নিতে পারেন। শ্রেণীভেদে ট্রেন ভাড়া পড়বে ২৬৫-৮০০ টাকা পর্যন্ত। ফেনী স্টেশন থেকে মহিপাল বাস স্টেশনের উদ্দেশ্যে অটো/রিক্সা ভাড়া করতে হবে। মহিপাল থেকে লোকাল বাসে ৫০-৮০ টাকা খরচে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত চলে যেতে পারবেন।
সীতাকুণ্ডে থাকার ব্যবস্থাঃ
সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য কোনও ২, ৩, ৪ বা ৫ তারকা হোটেলের ব্যবস্থা নেই। ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়লেও চট্টগ্রাম শহর বা কক্সবাজারের ন্যায় পর্যটনশিল্পে সীতাকুণ্ড এখনও পিছিয়ে আছে। তাই পরিপাটি করে থাকতে হলে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে হবে। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষণীয়। সীতাকুণ্ডে দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা অনেক। আর তাই যারা এখানকার বিভিন্ন এলাকা টহল দিবেন তাদের কয়েকদিন সময় লাগতে পারে, যার কারনে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে আসা যাওয়াটা একটু কষ্টকর হয়ে যাবে।
তাই এখানে সীতাকুণ্ডের কয়েকটি হোটেলের নাম দেওয়া হলোঃ
- হোটেল সৌদিয়া, সীতাকুণ্ড বাজার রোড, যোগাযোগ- ০১৮১৬৫১৮১১৯, ০১৯৯১৭৮৭৯৭৯
- হোটেল সাইমুন/সাইমুন আবাসিক, সীতাকুণ্ড বাজার রোড, যোগাযোগ- ০১৮৬৮০০০৪০০
এখানে কুমিরা অঞ্চলে রয়েছে-
- হোটেল থ্রি স্টার
সীতাকুণ্ডে খাবার ব্যবস্থা
যদিও সমগ্র সীতাকুণ্ড অঞ্চল ও দর্শনীয় স্থানগুলির আশেপাশের বাজার অঞ্চলগুলিতে খাবারের দোকান রয়েছে, তবুও এখানকার সীতাকুণ্ড বাজার এলাকাটি ভোজনবিলাসীদের জন্য জনপ্রিয় জায়গা। সীতাকুণ্ড বাজারে ছোটবড় নানান রেস্তোরাঁর দেখা পাবেন। তাও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রেস্তোরাঁর নাম উল্লেখ করা হলো-
আল আমিন রেস্টুরেন্ট ০১৭১১২৭০২৯৩
আপন রেস্টুরেন্ট ০১৮১১২৫৭৯২৩
সৌদিয়া রেস্তোরাঁ ০১৮১১৫৯৬৯৬৬
চট্টগ্রাম জেলা হতে আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করে প্রবেশ করুন চট্টগ্রামে যাতায়াত ও হোটেল ব্যবস্থা
আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই ঠিকানায়
Email: info@mrmworld.com
Facebook:
https://www.facebook.com/rashik.haider
https://www.facebook.com/mr.mixer.mm
আমি সীতাকুন্ডের একজন গর্বিত সন্তান। আপনার পেজ এবং ইউটিউব লিংকটা খুব এনজয় করেছি। সত্যি, দারুণভাবে আপনি আমাদের সীতাকুন্ড তথা চট্টগ্রামের দর্শণীয় স্থানগুলো তুলে ধরেছেন। আপনার ক্যামেরায় স্থানগুলো যেন আরোও জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। কোটি ভ্রমণ পিয়াসুর কাছে নিজ এলাকাকে এভাবে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এই পথচলা আরোও প্রসারিত হোক-এই কামনায়।
মোঃ রবিউল হাসান (রাজু)
অনেক ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন সবসময়।
১) সীতাকুণ্ডের সবগুলি স্পট ভিজিট করতে মোট কতদিন সময় লাগবে?
২) সি এন জি অটোরিকশা ছাড়া স্থানীয়ভাবে ঘুরার জন্য মাইক্রোবাস পাওয়া যায় কি?
৩) মাইক্রোবাস বা সি এন জি অটোরিকশা করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠা যায় কি না?
ধন্যবাদ,, সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য